
প্রচুর পরিমাণ বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হয় অতিরঞ্জন, ব্যংগাত্নক উপস্থাপনা ও মিথ্যা বর্ণনার উপর ভিত্তি করে, বিশেষ করে যখন ধর্মের প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞানের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করা হয়। যেমন, মানুষ এবং শিম্পাঞ্জীর ডিএনএ যে “৯৯% একই” এ কথাটি একদম পুরাই বোগাস, যেসব বিজ্ঞানী জীন নিয়ে গবেষণা করেন তারাও এ কথা স্বীকার করেন। তারপরও প্রতিনিয়ত এটাকে “বৈজ্ঞানিক সত্য” (Scientific Fact) হিসেবে উদ্ধৃত করা হয় যাতে বিবর্তনবাদের বিরোধিতাকারীদের বেকুব, অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক হিসাবে উপস্থাপন করা যায়।
আরেকটি প্রচলিত বিকৃতি বা মিথ্যাচার হচ্ছে, কোপার্নিকাসের সৌরকেন্দ্রিক (Heliocentric) মডেলকে খ্রিস্টানরা ধর্মীয় কারণে প্রত্যাখ্যান করেছিল ও তা দমিয়ে রেখেছিল। এই মিথ্যাচারের উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা দেখানো যে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাভাবিকভাবেই স্পষ্ট বিজ্ঞানের বিরোধী, স্পষ্ট যুক্তির বিরোধী। আরো উদ্দেশ্য হল এটা বোঝানো যে, আমরা যদি সত্যিকার অর্থেই যুক্তিভিত্তিক সমাজ চাই, বিজ্ঞান-মনস্ক সমাজ চাই তাহলে আমাদেরকে ধর্মের প্রতি প্রতিশ্রুতি ত্যাগ করতে হবে এবং বিশ্বকে একটি “পরম সত্যের” আলোকে দেখতে হবে। অর্থাৎ, আবিষ্কার ও উন্নতির পথে ধর্ম একটি স্বাভাবিক প্রতিবন্ধকতা।
এসব মারাত্নক বিকৃতি ও মিথ্যাচার খুবই জঘন্য। সত্যি বলতে কি, কোপার্নিকাস একজন ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক খ্রিস্টান ছিলেন। আর তিনি যখন সৌরজগতের এ মডেল প্রস্তাব করেছিলেন তা নিয়ে সে সময় এবং পরবর্তী আরো একশ বছর পর্যন্তও ক্যাথলিক চার্চের কোন সমস্যা ছিল না। তার সৌর-কেন্দ্রিক (Heliocentric) মডেল সে সময় তৎক্ষণাৎ খ্যাতি পায়নি, তার কারণ হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে মডেলটি টলেমির পৃথিবী-কেন্দ্রিক (Geocentric) মডেলের মত নির্ভুল ছিল না। কোপার্নিকাসের আগে টলেমির মডেলকে কয়েক শতাব্দীকাল জুড়ে সর্বোৎকৃষ্ট মান্দন্ড বা গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচনা করা হত। কোপার্নিকাসের মডেল টলেমির মডেলের মত গানিতিকভাবে অত সরল (mathematically simple) ছিল না। গ্রহগুলোর গতিপথ সঠিকভাবে নির্ণয় করার জন্য কোপার্নিকাসকে টলেমির চেয়েও বেশি সংখ্যক উপবৃত্ত কক্ষপথে আনতে হয়েছে যা কোপার্নিকাসের মডেলকে বেশি জটিল করে ফেলতে ভূমিকা রেখেছে। মোটকথা, গানিতিকভাবে কোপার্নিকাসের মডেল অত সহজে মাথায় ঢুকত না যত সহজে টলেমিরটা ঢুকত।
সর্বোপরি, সে সময় পরীক্ষালব্ধ কোন প্রমান (Empirical Evidence) ছিল না যার মাধ্যমে বলা যাবে যে, সৌর-কেন্দ্রিক মডেলটি সঠিক ছিল। সুতরাং, ওই সময় সৌর-কেন্দ্রিক তত্ত্ব মেনে নেওয়ার কোন বৈজ্ঞানিক কারণ ছিল না। বরং সর্বোচ্চ যেটুকু বলা যেত তা হচ্ছে, পৃথিবী-কেন্দ্রিক তত্ত্ব কিছুটা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত ছিল কারণ এর মাধ্যমে করা ভবিষ্যতের হিসাব-নিকাশগুলো অধিক সঠিক ছিল।
https://www.facebook.com/haqiqatjou/posts/1777530489132332