
আমেরিকার কর্তৃক সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ নতুন কোন বিষয় নয়।
এমনকি আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিকেও শুধুমাত্র লিবারেল সাম্রজ্যবাদীর অংশ হিসেবেও অভিহিত করা যেতে পারে। প্রায় দুই শতক ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে, আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি পুরো বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী (মনরও মতবাদ, ১৮২৩)।
সকল যুদ্ধাপরাধের কথা যদিও এখানে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। কারণ এর তালিকা অনেক লম্বা। কিন্তু সাম্প্রতিক এক ঘটনা আমাদের টনক নাড়া দিয়েছে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম New York Times এ এক খবর প্রকাশিত হয়। “বাঁধ যেটি সিরিয়ার টার্গেট-বর্হিভূতর তালিকায় ছিল” এই শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বাঁধটি টার্গেট-বর্হিভূতর তালিকায় থাকা সত্ত্বেও বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। এছাড়াও ঐ রিপোর্টে বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে, কিভাবে সিরিয়ার সবচেয়ে বড় বাঁধ, তাবকা তে হামলা পরিচালনা করা হয়েছিল।
ঊর্ধতন সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, প্রথমত, B-52 বোমারু বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছিল, যা মধ্য-আকাশে বিস্ফরোণ হওয়ার কথা ছিল যাতে করে মূল স্থাপনার কোন ক্ষতি না হয়। কিন্তু, প্রতিপক্ষের বিমানকে স্থানচ্যুত করতে ব্যর্থ হওয়ায়, টাস্কফোর্সের নির্দেশনা অনুযায়ী, তিনটা ২০০০ পাউন্ডের বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল, যার মধ্যে কমপক্ষে একটি বাঙ্কারবাস্টারও ছিল। এবং এবার বোমাগুলো লক্ষ্যে আঘাত হানার পরে যাতে বিস্ফোরিত হয়, সেভাবে ছোঁড়া হয়েছিল।
এছাড়াও টাস্কফোর্স ভারী আর্টিলারি দ্বারাও স্থাপনাটিতে হামলা চালায়।
সম্পর্কিত আর্টিকেল: সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জবাবদিহিতা এড়িয়ে যাওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া: আফগানিস্তান এডিশন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই হামলার ফলস্বরূপ হাজার হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন হবে, এ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত থাকা সত্ত্বেও এই হামলা চালানো হয়েছিল।
সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ যখন চরম পর্যায়ে, তখন এক আকস্মিক বিস্ফোরণ সিরিয়ার সবচেয়ে বড় বাঁধটি কাপিয়ে তুলেছিল, ১৮ তলার ইউফ্রেটিস নদীতে অবস্থিত এই স্থাপনাটি ২৫ মাইল লম্বা জলাধারা আটকে রেখেছিল বিশাল নদীবিধৌত ভূমি যেখানে যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ বসবাস করে।
(…)
এই হামলার জন্য, ইসলামিক স্টেট, সিরিয়ান সরকার এবং রাশিয়া আমেরিকাকে দায়ী করেছিল। কিন্তু, স্থাপনাটি টার্গেট-বর্হিভূত সংরক্ষিত বেসামরিক স্থাপনার তালিকায় থাকার কথাটি পূনরাবৃত্তি করে, তৎকালিন লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্টেফেন জে. টাউনসেন্ড আমেরিকার জড়িত থাকার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা রিপোর্টের উপর ভিত্তি বলে দাবি করেন।
(…)
কার্যত, টাস্ক ফোর্স ৯ দুই জন জ্যেষ্ঠ আমেরিকান সামরিক কর্মকর্তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ”Task Force 9” নামক U.S Special Operations Unit এর সদস্যরা আমেরিকার সমরাস্র ভান্ডারে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালি বোমা দিয়ে হামলা চালিয়েছিল, যার মধ্যে ছিল কমপক্ষে একটি BLU-109 বাঙ্কারবাস্টার যা বিশাল আকৃতির স্থাপনা ধ্বংস করার জন্য বিশেষতভাবে তৈরি করা হয়েছিল। আমেরিকান মিলিটারির নিজস্ব রিপোর্টেও সতর্ক করা হয়েছিল যে, এই বাঁধে হামলা করা হলে ঐ অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হবে এবং ফলস্বরূপ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হবে।
যেহেতু এই বাঁধটি সংরক্ষিতের তালিকায় ছিল, এটি সহজেই অনুমেয় যে, হামলা করার সিদ্ধান্তটি উচ্চ পর্যায় থেকেই এসেছিল। কিস্তু সাবেক কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, এই হামলা চালানো হয়েছিল সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে, কোন ধরনের পূর্বানুমতি ছাড়া, যা শুধু মাত্র জরুরী অবস্থায় অবলম্বন করা হয়।
বাঁধ সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে ,পরবর্তীতে তিন জন বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণকারীকেও সম্মিলিত বাহিনীর বিমান হামলায় হত্যা করা হয়েছিল, যারা বড় ধরণের বিপর্যয় ঠেকাতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।
ঐদুজন সাবেক কর্মকর্তা যারা নিজেদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলতে রাজি হন, কারণ তারা অননুমোদিত এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য, আরো বলেন যে, এয়ার মিশনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও টাস্কফোর্সের বেপরোয়া কর্মকান্ড লক্ষ্য করেছিল।
এটা অনুমান করা যায় যে, এই লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য কাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, কার্যত কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এই টাস্কফোর্সের বিরুদ্ধে। বরং আত্নরক্ষার স্বার্থের দোহাই দিয়ে যেভাবে বাঁধে হামলা করা হয়েছিল ঠিক একই অযুহাত দেখিয়ে এই গোপন ইউনিট তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছিল।
হ্যাঁ, তুমি যথার্থই অনুমান করেছ যে, একজন ব্যাক্তিকেও এর জন্য শাস্তি দেয়া হয়নি।
আমেরিকা কি সেরা নয়?
RELATED: The Inhumanity of the US Army Laid Bare
আদর্শগতভাবে, লিবারেলিজম সবসমই মেকি শান্তির এক কল্পিত আত্নতুষ্টিতে ভোগে, কিন্তুু লিবারেলিজম কিভাবে অসদয়ভাবে স্বয়ং নিজেকে মানুষের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে তা যেন আমেরিকান সামাজ্যবাদ যথাযথভাবে প্রতিফলন করে।
কিন্তু এই একই লিবারেলরাই আবার শরীয় বিধি-বিধানের সমালোচনা করে যেখানে শরীয়াহ সকলের জন্য ন্যায়বিচারের বানী প্রচার করে। কিন্তু আমেরিকা কিভাবে এমন ঘৃণ্য অপরাধ করা সত্ত্বেও প্রতিবার পার পেয়ে যেয়ে সক্ষম হয়?
সম্পর্কিত আর্টিকেল: হুদুদ, নৈতিক অধঃপতন এবং সাম্য সম্পর্কিত হাদিসসমূহ
যাইহোক না কেন, নিসন্দেহে এমন অপরাধ অবিরতভাবে সংঘটিত হতে থাকবে, যদি লিবারেলরা তাদের মতবাদের উপর অটুট থাকে। এবং এও পরিষ্কার যে, এমন অপরাধের শাস্তিও কখনও হবে না।