
যখন আমি কলেজে ছিলাম, “সমসাময়িক নৈতিক সমস্যা” বিষয়ে দর্শনশাস্ত্রের একটি ক্লাস করেছিলাম। ওটা একটা লিবারাল প্রতিষ্ঠান ছিল, তাই স্বাভাবিক ভাবেই এমনভাবে পরিচালিত হোত, যেন আমাদের মাঝে ধীরে ধীরে লিবেরাল আদর্শ রোপণ করতে পারে। তন্মধ্যে ভিগানিসম(veganism) থেকে গর্ভপাত পর্যন্ত অনেক বিষয়ই ছিল।
মজার ব্যাপার হল, গর্ভপাতের সমর্থনে ওই প্রফেসর তার বক্তব্যে ডেভিড হিউমের একটি উদ্ধৃতি পেশ করে — ডেভিড হিউম উনিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী পশ্চিমা দার্শনিকদের একজন — মূলত, কারো সন্তান জন্মের পর বোঝায় পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে গর্ভপাত করে ফেলার পক্ষে জোর দেওয়ার জন্য সে ডেভিড হিউমের কিছু উক্তির ব্যাখ্যা করেছিল। সে ঔদ্ধত্যের সাথে এটাও বলে যে, ওই ভ্রূণের জীবন আছে কি নাই এই বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক।
আমার ফাইনাল পেপার জমা দেওয়ার পর, (একটা ভাল গ্রেড এবং ক্লাসে পাস নিশ্চিত হওয়ার পর) আমি আমার প্রফেসরের সাথে একটু আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমাদের আলোচনার সময়, আমি ডেভিড হিউমের উক্তিটি নিয়ে আসি কিন্তু গর্ভপাতের জায়গায় এবার আত্মহত্যাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করি। মূলত, আমি তর্ক করার সময় ওই একই পয়েন্টগুলো ব্যবহার করেছিলাম যেগুলো সাধারণত তারা ব্যবহার করে থাকে যেমন, “আমার দেহ, আমার অধিকার” , “নিজেকে বোঝা মনে হলে আত্মহত্যা করো”। প্রফেসর তখন স্পষ্টভাবে অস্বস্তিবোধ করছিল আর শেষ পর্যন্ত সে নিজের কট্টর লিবারালগীরি ছেড়ে বলল:
“মানুষটার বেচে থাকার চেষ্টা করা উচিত।”
নীতির মানদন্ডে সেকুলারদের ব্যবহৃত দৃষ্টাস্ত খুব কমই টিকে।
RELATED: Atheism Has No Morality
আরো একটা ব্যাপার আছে, ওই প্রফেসর আমাদের থেকে ডেভিড হিউমের ব্যাপারে একটা তথ্য গোপন করেছিল। হিউম নিজেই আসলে একজন কট্টর নাইলিস্ট(Nihilist) ছিল। — নাইলিস্ট: একজন ব্যক্তি যে বিশ্বাস করে যে জীবন অর্থহীন এবং সমস্ত ধর্ম ও নীতিনৈতিকতা প্রত্যাখ্যান করে —
সে লিখেছিল যে, আমরা মানুষরা শেকলবদ্ধ হয়েই জন্মাই, আমরা জন্মের সময় আমদের মা-বাবা, ধন-সম্পদ, পরিবেশ কিছুই বাছাই করতে পারিনা, আসলে আমাদের কোন কিছুর উপরই নিয়ন্ত্রণ নেই, সব কিছুই পুর্বনির্ধারিত।
যাইহোক না কেন, সে কিন্তু ঠিকই এই কথা বলে যে, একটা বিষয় আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন আর সেটা হল, আমরা বেঁচে থাকব নাকি মারা যাব এই সিদ্ধান্ত। এইজন্য সে আরো জোর দিয়ে বলে, কোন ব্যক্তির জন্য যদি বেঁচে থাকা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, তার উচিত আত্মহত্যা করা।
কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কেন এই আধুনিক বিশ্ব একটা বিশাল পাগলাগারদে পরিণত হচ্ছে যেখানে হতাশা আর আত্মহত্যার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে?