
প্রথমেই পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো যে, আমরা লিবারেল-সেকুলারদের ঊদিগ্ন করার মোটেও চেষ্টা করছি না, তারা ইত্যেমধ্যেই চরমভাবে চিন্তিত, উদিগ্ন এবং নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত।
কিন্তু এটা সুস্পষ্ট যে, সবকিছু তাদের ইচ্ছা মত বা তারা যেভাবে পরিকল্পনা করেছিল সেভাবে হচ্ছে না।
৯/১১ এর পরবর্তী সময়ে, তারা মুসলিম বিশ্বকে লিবারেলাইজ ও সেকুলারাইজ করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে উল্লেখযোগ্যভাবে আরববিশ্বে। যদিও এই অর্থ আরো কার্যকরীভাবে ব্যবহার করা যেত।
কিন্তু তাদের সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, গত কয়েক মাস ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আরবরা ধীরে ধীরে আরো ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বিশেষত যুবসমাজ।
সাম্প্রতিক আরব ইয়ুথ সার্ভের নতুন এক গবেষণায়ও এই ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায়।
প্রথমত, এই জরিপ প্রক্রিয়া সর্ম্পকে কিছু ধারণা দেয়া যাক:
- জরিপটি পরিচালনা করা হয় বাৎসরিক ভিত্তিতে।
- সর্বশেষ ১৪ তম জরিপ চালানো হয়।
- কিছু দিন আগেই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে যার ফলাফল প্রকাশিত হয়।
- জরিপ পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছিল, Burson Cohn & Wolfe নামক এক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের উপর। প্রতিষ্ঠানটির MENA শাখার প্রেসিডেন্ট, সুনিল জন, একজন ইন্ডিয়ান ব্যবসায়ী।
- সুতরাং, এটি সম্পূ্র্ণ পরিষ্কার যে, ইসলামিক পুনর্জাগরণ বা ইসলামকে গৌরবান্বিত করে এমন তথ্য প্রদর্শন করে প্রতিষ্ঠানটি অথবা MENA শাখার প্রেসিডেন্টের কারো ব্যাক্তিগত স্বার্থ নেই। সুতরাং, এই জরিপের উপস্থাপিত ফলাফলের সম্ভাব্য নিরপেক্ষতা এবং বস্তুনিষ্ঠতা সহজেই অনুমান করা যায়।
জরিপের প্রাপ্ত ফলাফলের উপর আলোকপাত করার আগে, জরিপটি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে যাক। দ্বিতীয় পৃষ্ঠা অনুযায়ী,
আরব বিশ্বে জনসমীক্ষা সম্পর্কিত যতগুলো গবেষণা হয়, তার মধ্যে সর্ববৃহৎ হচ্ছে ASDA’A BCW আরব ইয়ুথ সার্ভে, যা এইবছর ১৪ বছরে পর্দাপণ করলো।
তৃতীয় পৃষ্ঠায় জরিপ পরিচালনায় যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে:
১৭ টা আরব দেশের ৫০টি শহরে ৩৪০০ যুবকের সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে।
যার মধ্যে রয়েছে ১৮-২৪ বছর বয়সী যুবক।
অর্ধেক যুবক এবং বাকি অর্ধেক যুবতি।
২০২২ সালের ১৩ই মে থেকে ১৬ই জুন পর্যন্ত এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
পৃষ্ঠা ৫ অনুযায়ী, সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভুলের সম্ভাবতা ১.৬৫%।
IDS Research & Consultancy এর পেশাদার সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী কর্তৃক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। সম্পর্ণ সাক্ষাৎকারটি গৃহণ করা হয়েছে মূলত আরবি এবং ইংরেজি ভাষায়। সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভুল হওয়ার সম্ভাব্যতা +/- ১.৬৫%, যা উপশাখাগুলোর ক্ষেত্রে আরো বেশি। প্রতিটা দেশ থেকে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত সমানভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হচ্ছে প্রতিনিধিত্বমূলক পরিসংখ্যান।
সম্পর্কিত: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় যুবকেরা তাদের বাবা-মায়েদের তুলনায় বেশি ধর্মপরায়ন।
এখন জরিপের ফলাফলের দিকে আলোকপাত করা যাক।
যদিও সাক্ষাৎকারের প্রশ্নসমূহ “বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিকভাবে” বিভক্ত ছিল, আমরা শুধুমাত্র ধর্মসম্পর্কিত প্রশ্নসমূহে আলোকপাত করবো।
সম্ভবত, এই জরিপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হলো ৮ম পৃষ্ঠা থেকে উদৃত নিম্নক্ত গ্রাফটি:
ধর্মকে ব্যাক্তিপরিচয়ের মূখ্য বিষয় বলে মনে করে এমন যুবকের সংখ্যা শুধু এক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ শতাংশ। এর ফলস্বরূপ, আরবদের মধ্যে উপজাতীকেন্দ্রীকতা এবং গোষ্ঠীকেন্দ্রীক ঐতিহ্য প্রবণতাও হ্রাস পেয়েছে। তবে, জাতীয়তাকেন্দ্রীক প্রবণতার কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।
কারণ, আরব বিশ্বকে সেকুল্যারাইজ করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আরবের ইতিহাস ঐতিহ্য বা আরবি ভাষা নয়, বরং জাতীয়তাবাদকে প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে (যা সংযুক্ত আরব আমিরাতর ক্ষেত্রে স্পষ্টত প্রতিয়মান) কারণ, আরব ইতিহাস-ঐতিহ্য বা আরবি ভাষার উপর গুরুত্বারপ হিতে বিপোরিত হতে পারে, কারণ এগুলো ইসলামের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত।
আমরা সুস্পষ্টভাবে দেখতে পারছি যে, সংখ্যাটি লিভেন্টের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এছাড়াও, আরব ব্যারমিটার জরিপ (যেখানে, আরব যুবকদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল, যা শুধুমাত্র আরব মুসলিম যুবকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না) এর সাথে এই জরিপের আশ্চর্যজনক মিল রয়েছে।
মনে হচ্ছে, ডেভিড উড এবং তার মত যারা আছে, তাদের মুসলিমদের আক্রমণ করার চেয়ে, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং অন্যান্য জায়গার খ্রিস্টানদের প্রকৃত খ্রিস্টান বানানোয় মন দেয়া দরকার।
সম্পর্কিত আর্টিকেল: প্রচুর সমর্থক হারাচ্ছে খ্রিস্টধর্ম: কট্টর সমর্থকরা কি করছে এ ব্যাপারে?
যাইহোক না কেন, ৪১% নাম্বারটা যদিও কারো কাছে খুব সামান্য মনে হতে পারে, এই নাম্বারটা লিবারেল-সেকুলারিস্টদের কাছে বিরাট। কারণ, তারা এর ঠিক বিপরীত ফলাফলের জন্য প্রচুর পরিমাণ সময়, অর্থ, শ্রম সবই ব্যয় করেছে, এবং প্রয়োজনে অরাজকতার পথও বেঁছে নিয়েছে। বর্তমানে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেয় যে, আরব যুবকরা ধর্মকে (ধরে নেয়া যায় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা ইসলাম) তাদের জীবনের (বিশেষভাবে যেখানে গ্রহণ করা উচিত) মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০০ মিলিয়ন আরব যুবকের মধ্যে, এক বছরেই ৭% বৃদ্ধি, যা প্রবণতার মাত্রা এবং গুরুত্ব বিষয়াবলি যা আবর যুবকদের মধ্যে এমন প্রবণতার সৃষ্টি করেছে তা নির্দেশ করে। ১% বৃদ্ধি যা লক্ষ লক্ষ আরব যুবককে নির্দেশ করে।
দশম পৃষ্ঠার তথ্য অনুযায়ী, ৭৭% যুবক মনে করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। এর দ্বারা কি পরিমাণ যুবক বুঝাতে চেয়েছে যে, ধর্মীয় স্কলারদের সেকুলার শাসকদের রাজনীতি থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা উচিত, তা সম্পর্কে যদিও আমাদের যথেষ্ট উত্তর নেই, তবুও তা আমাদেরকে বিস্মিত করে।
১৫ তম পৃষ্ঠার, নিম্নোক্ত গ্রাফ এর দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক:
অধিকাংশ আরব যুবকই শরীয়াহ ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা প্রতাশ্যা করে। উপসাগরীয় ৭০% এমন প্রত্যাশা লালন করে। লিভেন্ট
এখন, ২৭ পৃষ্ঠায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আরব যুবকদের গণতন্ত্রের প্রতি মনোভাব কেমন তা দেখে নেয়া যাক।
গণতন্ত্র বিরোধি মনোভাব পোষণ করে, এমন আরব যুবকের সংখ্যা শুধুমাত্র ৪ বছরে প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্ধেক থেকে বর্তমানে দুই-তৃতীয়াংশে এসে দাড়িয়েছে। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, লিভেন্টের নাম্বারটাই বৃহত্ত ছিল।
সম্পর্কিত আর্টিকেল: ভয়াবহ অবস্থা, আবরবা গণতন্ত্রে আস্থা হারাচ্ছে।
সর্বশেষে, মুসলিমদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা এবং ইসলামের সান্নিধ্যে নিয়ে আসার জন্য বৃহত্রর পরিসরে উদ্যাগ নেয়া খুবই জরুরি, তবুও এসব ফলাফল যথেষ্ট উৎসাহদায়ক।
আলহামদুলিল্লাহ।
সমসাময়িক প্রবণতা এবং অন্যান্য নির্দেশক, ইঙ্গিত দেয় যে, আরব যুবকদের মধ্যে ইসলামিক পূর্ণজাগরণ সংঘটিত হচ্ছে। এবং লিবারেল-সেকুলারদের গুরুত্বপূর্ণ টার্গেটগুলো মধ্যে একটা হওয়া সত্ত্বেও এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এমন প্রবণতা এবং নির্দেশকগুলো বর্তমানে শুধু আরবদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সুযোগে পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, বর্তমান নিও-লিবারেল গ্লোবালাইজেশন এবং এর নিয়মিত সঙ্গী সেকুলারাইজেশনের যুগে শুধুমাত্র মুসলিম বিশ্বেই যুবকদের মধ্যে ধর্মীয় প্রবণতা বৃদ্ধির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে আসছে।